অনু একদিন আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘জানিস, আমি কাকের কথা বুঝতে পারি’

আমি বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকাই। হুমায়ূন আহমেদ ছোটোবেলায় তার আম্মাকে বলতো তিনি গরুর কথা বুঝতে পারেন। এখান থেকে অনুর বায়াস হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। সে বইটই পড়ে না।

আমি ধৈর্যশীল শ্রোতা হিসেবে চুপ করে রইলাম।

‘এইযে দেখ আমাদের মাথার উপর যে কাকটা কা-কা করছে, ও বলছে তাড়াতাড়ি ওর নিচ থেকে সরে যেতে। তার খুব বেগ পেয়েছে।’

মাথার ঠিক উপরে রোগা পাতলা একটা গাছ। গাছের পাতাগুলো অপরিচিত। আগে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। উপর থেকে চার নাম্বার ডালে একটি কাক উদাস মনে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আমরা দ্রুত কাকটার নিচ থেকে সরে দাঁড়িয়ে বিষ্ঠাত্যাগের মতো নান্দনিক দৃশ্যের জন্য অপেক্ষা করি।

 

আমি করি না, মূলত অনু করে।

 

গন্তব্য একই দেখে আমাকে বাধ্য হয়ে তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আমি ঘড়ি দেখি। সাফ জানিয়ে দিয়েছি পাঁচ মিনিটের বেশি এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করবো না। বরাবর তিন মিনিট সতেরো সেকেন্ডের মাথায় কাক তার কর্ম সম্পাদন করে।

স্বাভাবিক রিঅ্যাকশন হিসেবে অনুর খুশি হবার কথা। তার অনুমান সত্যি হয়েছে। কিন্তু সে হঠাৎ রেগে গিয়ে বিড়বিড় করে কী যেন বলতে লাগলো। আমি বললাম—কী হলো?

অনু রেগে এবার চিৎকার করে উঠলো। সে চিৎকার করছে অন্য একটি ভাষায়। চিৎকারের মধ্যে কুকুরের ঘেউঘেউ করার সুর আছে।

আমার কেমন যেন গা শিরশির করে উঠে।

কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ কলেজে যাই।

 

কলেজে তাকে দেখলে মনে হয় একদম স্বাভাবিক। কিছুই ঘটেনি। জান্নাতী নামের এক গর্দভ ক্লাসমেটকে জৈব যৌগ বুঝাচ্ছে, ব্রেক টাইমে আচার খাচ্ছে, ওয়াশরুমে যেয়ে চুল ঠিক করছে। সবকিছু ঠিকঠাক। কিন্তু আমার মনে হলো, কোথাও একটু গড়মিল আছে।

 

চান্দাই সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণী ‘খ’ শাখার আমরা নিয়মিত ব্যাকবেঞ্চার। আমি আর অনু শেষ বেঞ্চ ধরার জন্য প্রায় ত্রিশ মিনিট আগে যাই। আমাদের প্রতিযোগীর সংখ্যা অনেক। দিনগুলো ভালো যাচ্ছিলো। প্রায় সব ক্লাস কাটে চোর, পুলিশ, বাবু, ডাকাত খেলে কিংবা গল্পের বই পড়ে। ভালো ছাত্র না হওয়ায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মতো অবাস্তব  প্রত্যাশা আমাদের কাছে কেউ করে না। অনু আমার চেয়েও চিন্তামুক্ত অবস্থায় দিন কাটায়। তার গ্রামের বাড়িতে আধপাগল বাবা ছাড়া আর কেউ নেই। এখানে সে থাকে হোস্টেলে। হোস্টেলের নাম ‘কামিনী’। ইটের তৈরি তিনতলা এই বিল্ডিংয়ের সামনে কয়েকটি রজনীগন্ধা গাছ। রাতের বেলা সেখান দিয়ে হেঁটে গেলে রজনীগন্ধার সুবাসে মাথা নষ্ট অবস্থা। মাঝে মাঝে মন চায়, রাতের অন্ধকারে ‘কামিনী’ নামফলক পালটে ‘রজনীগন্ধা’ লাগিয়ে দেই।  নামফলক কোথায় বানায় এই জ্ঞানের অভাবে আমরা কাজটি বাস্তবায়ন করতে পারছিলাম না।

যাই হোক।

যা বলছিলাম।

আমরা জানি, ভবিষ্যতে আমাদের খাওয়া-পরা নিয়ে বেগ পেতে হবে না। কোনোমতে ইন্টার পাশ করলেই আমাদের বিয়ে হবে একজন মধ্যবয়সী সেকেন্ড ক্লাস সরকারি কর্মকর্তার সাথে। অনু দেখতে আমার চেয়ে সুন্দরী। বড় বড় চোখ, খাড়া নাক, সুন্দর ফিগার, ফর্সা গায়ের রঙ, নাকের ডানে বাদামী রঙের তিল তাকে ফার্স্ট-ক্লাস সরকারি কর্মকর্তার নজরেও ফেলতে পারে। বিয়ের গুনে গুনে ঠিক দশ মাসের মাথায় আমাদের ঘর আলো করে নতুন শিশু আসবে এবং বছর বছর এই চক্র পুনরাবৃত্তি হবে।

এই পর্যন্ত ছিলো আমার ভাবনা।

আমার ভাবনায় ছেদ ঘটালো অনু নিজেই।

একদিন ক্লাসে শেষ বেঞ্চে বিমল করের ‘অজ্ঞাতবাস’ বইয়ে ডুবে আছি। পাশ থেকে শুনলাম অনু বিড়বিড় করে বলছে, ‘সামনে যান স্যার৷ পিছনে দাঁড়াবেন না। এ কী, এতো এতো গা ঘেঁষে দাঁড়ালেন কেনো!…লোকে কী বলবে…প্লিজ ছাড়ুন তো’

অনু হাসতে হাসতে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। আমি পেছনে তাকাই। আমাদের পিঠ ঠেকে আছে সাদা দেওয়ালে। আস্তে আস্তে বলি, ‘কার সাথে কথা বলিস?’

‘তরিকুল স্যারের সাথে। কিছুদিন হলো আমাদের প্রেম হয়েছে..ভয়ে তোকে বলিনি। এখন উনি আমাকে নিয়ে সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যেতে চান। শুধু আমি আর উনি। আমারও খুব যেতে ইচ্ছা করছে। একবার সমুদ্র দেখে আসি, কী বলিস?’

আমি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলাম।

তরিকুল স্যার আমাদের কলেজে নতুন এসেছেন। বয়স পয়ত্রিশ পার হবে বোধহয়। গণিত পড়ান। খুব কঠিন মানুষ। ক্লাসে অংক না পারলে বেত দিয়ে মারেন। এবং এ মারপ্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয় অনুকে দিয়ে। প্রথম দিন ব্যাপারটি ছিলো অত্যন্ত নাটকীয়। সবার মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব। তিনি নিজের হাতের উপর অনুর বাম হাত সোজা করে রাখেন৷ অনু চোখ বন্ধ করে। তাকে দেখে একটুও নার্ভাস মনে হয় না। বরং মনে হয় সে মজা পাচ্ছে পুরো ব্যাপারটাতে। সপাং করে নেমে আসে চিকন বেতের বাড়ি। পরপর তিনটি। এরপর হাত বদলে আরও তিনটি। চেহারার কোনো পরিবর্তন হয় না অনুর। সে একধরনের আত্মতৃপ্তি নিয়ে আবার বেঞ্চে এসে বসে।

 

বাংলা, ভূগোল কিংবা রসায়ন স্যারের প্রেমে পড়া যায়, কিন্তু অংক স্যারের প্রেমে পড়ার মতো দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হয় না। অনুকে বললাম, ‘একদম ঠিক হবে না কাজটা। এছাড়া এমনও তো হতে পারে উনার ঘরে বউ বাচ্চা আছে!’

বিস্ময় নিয়ে অনু বলে,‘কী যা-তা বলিস! একসাথে সমুদ্র দেখার সাথে বউ বাচ্চার কী সম্পর্ক? উনাকে কঠিনভাবে বলে দিয়েছি কোনো ফন্দি ফিকির এঁটে শরীরে হাত দেওয়া যাবে না। বড়জোর মাথা টিপে দিতে পারে। আমার সারাদিন মাথা ব্যাথা করে।’

এরপর অনুকে সত্যিই ক্লাসে দেখা গেলো না।

তরিকুল স্যার কলেজে আসলেন দু’দিন পর। দপ্তরির কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তার মেয়ে অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। তিনি ছুটিতে আছেন। ছুটি থেকে এসে তিনি প্রথম ক্লাসে পারমুটেশন কম্বিনেশন অংক করালেন। আমি স্যারকে সুক্ষ্মভাবে খেয়াল করলাম। পাতলা শরীর, ত্রিভুজাকৃতির চেহারা, সাথে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। সব মিলিয়ে চমৎকার একটা কম্বিনেশন। তিনি টকটকে হলুদ রঙের হাফ হাতা শার্টের সাথে নেভি ব্লু প্যান্ট পড়েছেন। তাকে দেখাচ্ছে সদ্য ফোটা সূর্যমুখী ফুলের মতো।

মাথার উপর ফুল স্পিডে ফ্যান চলা সত্ত্বেও একটু পর পর রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছছেন। প্যান্টের পকেট থেকে সাদা রুমাল উঁকি দেওয়া ছাড়া আর কোনো অস্বাভাবিকতা আমার চোখে পড়লো না। জান্নাতী নামের বোকা মেয়েটা তিনটি বেতের বাড়ি খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে গেলো সেদিন। সম্পূর্ণ পৃথিবী আসলে স্বাভাবিকভাবে চলছিলো। শুধু আমি কোথাও মন বসাতে পারলাম না। কেমন অদ্ভুত এক অন্ধকার আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখলো।

প্রায় এক মাস কেটে গেলো। ধীরে ধীরে সবাই খেয়াল করলো অনু আর ক্লাসে আসে না। হঠাৎ করে তার কী হলো কেউ জানেনা। ‘কেউ জানেনা’ কথাটি পুরোপুরি সঠিক না। আমি একটু একটু জানি। তবে সেটা বিশেষ কন্ট্রিবিউটরি কিছু না। হালকার উপর ঝাপসা। ক্লাসের মেয়েগুলো প্রায়ই আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমার সাথের ওই মেয়েটা আর আসবে না?’

আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলি, ‘আসবে। একটু দেশের বাড়ি গেছে। চলে আসবে।’

অনু ফিরে আসে এক মাস সাত দিন পর।

আমার একসাথে অনেক অনুভূতি হয়। অনেক প্রশ্ন জমে। কিছুই করতে পারি না। একগাদা বালু গিলে ফেললে যেমন অনুভূতি হয়, সেরকম একটা অনুভূতি আমাকে আটকে দেয়। অনু অস্বাভাবিকরকম স্বাভাবিক ব্যবহার করে। আগের চেয়এ চঞ্চল, আরও রহস্যময়ী। তার চুল একমাসে অর্ধেক হাত লম্বা হয়েছে। চুল কি এতো দ্রুত বাড়ে? কী জানি। একজন কেশ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কোনো কারণ ছাড়াই তার চুলে আমি হাত দেই। যত্ন করে বাঁধা মোলায়েম, মসৃণ চুল।

আমরা আবারও লাস্ট বেঞ্চে বসি।

লাস্ট বেঞ্চ তার জীবন ফিরে পায়। জান্নাতী ঘুরে ঘুরে অনুর কাছে পড়া বুঝতে আসে। অনু ভালো ছাত্রী না তেমন, মেয়েটা তবু কেনো আসে কে জানে। হয়তো সে পড়া বুঝতে নয়, অনুর কাছেই আসে। জানি না।

 

এক ইংরেজি ক্লাসের মধ্যে অনু আমাকে বলে, ‘জানিস সমুদ্রের পানি সারাদিন কুচকুচে কালো। শুধু রাতের বেলা নীল হয়। ঠিক নীল না, বেগুনি আর নীল রঙের মাঝামাঝি। খালি চোখেই দেখা যায়। কিন্তু এটা দেখার জন্য সাধনা করতে হবে। কঠিন সাধনা।’

‘কঠিন সাধনা কীভাবে করে?’

‘সারা রাত শিরদাঁড়া খাড়া করে চোখের পলক না ফেলে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবি। এক মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করলেও সুযোগ মিস। কারণ এই গোল্ডেন মোমেন্ট যে কোনো সময় আসে…’

‘সমুদ্র কি অনেক বড়?’

আমার প্রশ্ন শুনে অনুর হাসতে হাসতে খিল ধরে যাওয়ার অবস্থা।

‘শুধু শুধু মানুষ ফালতু কথা বলে। সাইজেও বেশি বড় না। আমাদের হোস্টেলের পাশে ডোবাটার ডাবল হবে। এই যা!’

আমি নিজ চোখে কখনো সমুদ্র দেখিনি। বইয়ে পড়েছি। লেখকদের প্রতি একটু অভিমানই হলো  বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলার জন্য।

অস্ফুট স্বরে বলি, ‘ও!’

তরিকুল স্যারকে নিয়ে প্রশ্ন করার আগেই ক্লাস শেষ হয়ে যায়। আমাদের কথা থেমে যায় সেখানেই।

এরপর প্রায় চারদিন অনু নিয়মিত কলেজে আসে। মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করে, নোট করে। জান্নাতীকে পড়া বোঝায়। আমি আড়চোখে তাকে দেখি। বোঝার চেষ্টা করি।

ঝামেলা হয়ে যায় পঞ্চম দিন।

হঠাৎ করে রুনা ম্যাডামের ক্লাসে সে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। করিডোর না পেরুতেই হড়বড় করে বমি করে। আমি মাঠের কোণায় নিয়ে যাই তাকে। জামা কাপড় বমিতে মেখে বিশ্রী অবস্থা। নিচু হয়ে বমি করার সময় কপাল ধরে রাখি। এর পেছনের কোনো সায়েন্টিক ব্যাখ্যা আমার জানা নেই। ছোটবেলা থেকে দেখছি কেউ বমি করলে তার কপাল ধরে রাখতে হয়। আমিও তাই করি।

অনু শান্ত হয়ে আমাকে বলে, ‘আমার পেটে বাচ্চা এসেছে। মনে হচ্ছে মেয়ে বাচ্চা। কী নাম রাখা যায় বলতো? কামিনী নামটা কেমন? একটু হিন্দু হিন্দুভাব আছে, তরিকুল রাজি নাও হতে পারে। দেখি রাজি করাতে পারি কি-না…’

‘অ্যাই, তুইও একটা নাম বল। একমাত্র খালা হবি তুই। তোর পছন্দেরও একটা ব্যাপার আছে’, অনু আমার কনুইয়ে ধাক্কা দিয়ে হাসতে হাসতে বলে।

আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারি না। মনে হলো আকাশটা হঠাৎ করে নিচে নেমে এসেছে। যেকোনো সময় মাথায় ভেঙে পড়বে।

সেদিনের মতো আমরা আর ক্লাসে ফেরত যাই না। ক্লাসরুম থেকে ব্যাগ নিয়ে এসে চুপচাপ হাঁটতে থাকি বাড়ির দিকে। আমার ভীষণ কান্না পায়। বাড়ি ফিরে আর অন্য কিছু ভাবতে পারিনা। পরের দিন করবো ভেবে অনেকগুলো প্রশ্ন খাতায় লিখে গুছিয়ে রাখি।

আমার খাতায় লেখা প্রশ্নগুলোর মুক্তি হয়না। তারা খাতায় আটকা পড়ে। গ্রীষ্ম পেরিয়ে শরৎ আসে-অনু আসে না। লাস্ট বেঞ্চে এখন আমি আর জান্নাতী বসি। তেমন কোনো কথা হয় না আমাদের। দু’জনই চুপচাপ থাকি।

একদিন হঠাৎ ক্লাসের মধ্যে জান্নাতী জিজ্ঞেস করে, ‘অনু কি মারা গেছে?’

আমি ভীষণ আশ্চর্য হই।

তাকিয়ে দেখি জান্নাতী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তার চোখের পানি চোখ-নাক-ঠোঁট পার হলে গলায় এসে পৌঁছেছে। আমার প্রতিরক্ষা বূহ্য ভেঙে যায়। চোখ কখন ভিজে যায় টের পাই না।

ভাঙা গলায় বলি, ‘মারা যাবে কেনো? ও আছে, কিন্তু কোথায় আছে খুঁজে পাচ্ছি না। সময় লাগবে।‘

অনুকে আর খুঁজে পাইনি।

তখন থেকে আমার নতুন একটা অভ্যাস হয়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পত্রিকা পড়া। ‘হারানো বিজ্ঞপ্তি’ নামের পত্রিকার অংশটি ছিলো মূল আগ্রহের জায়গা। সেখানে কাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দিতো তাদের প্রিয়জনেরা। আবার অজ্ঞাত কাউকে রাস্তার ধারে পেলে সে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হতো ছবি সহকারে।

আমারও খুব ইচ্ছা হতো অনুর জন্য একটা বিজ্ঞাপন দেই। দুঃখের ব্যাপার হলো আমার কাছে অনুর কোনো ছবি ছিলো না। অনেকদিন পর ব্যাগের এক কোণায় তার একটি কালো ক্লিপ পেয়েছি। সম্ভবত রাখতে দিয়েছিলো কোনো এক সময়।

তখন ইচ্ছা হয়েছে ক্লিপের ছবি তুলে লিখি,‘ক্লিপের মালিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নাম অনু, বয়স-১৭..ক্লাসের শেষ বেঞ্চ তাকে ছাড়া অত্যন্ত অসহায়বোধ করছে। সে ছাড়া আমার আর কোনো বন্ধু নেই। কেউ তাকে দেখে থাকলে প্লিজ জানান’

একসময় আমাদের ইন্টার পরীক্ষা হয়ে যায়। অনু সত্যিই ফেরত আসে না। তার হোস্টেলের কেউ কিছু বলতে পারে না। কলেজ কিংবা হোস্টেলের কোথাও তার বাড়ির ঠিকানা নেই। শেষমেষ জান্নাতীর ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে থানায় মিসিং পার্সন হিসেবে জিডি করি। এর বেশি আর কীইবা করার ছিলো?

কলেজের শেষ দিন তরিকুল স্যারের সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে গেলাম ভয়ে ভয়ে।

‘স্যার, আপনি কি অনুর কোনো খোঁজ জানেন? প্রায় সাতমাস ধরে ওর কোনো খোঁজ নেই’

‘হু ইজ অনু?’ স্যার ভ্রু কুঁচকে বললেন।

একটু ভড়কে গেলাম।

আস্তে আস্তে বললাম, ‘কেউ না। ভালো থাকবেন স্যার।’

স্যার বিরক্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

 

‘ল অব ফরগেটিং’ বলে, একজন মানুষকে ভুলে যেতে অন্তত আঠারো মাস থেকে দুই বছর সময় লাগে। সামনের বছর দেড় যুগ হবে অনুকে হারিয়ে ফেলার। 

দেড় যুগ মানে আঠারো বছর। ল অব ফরগেটিং আমার ক্ষেত্রে কাজ করেনি। 

আমি এখন সমুদ্র দেখতে যাই।

রাত হলেই কেমন অস্থির লাগে। দিনের চেয়ে রাতের সমুদ্রই বোধহয় বেশি টানে।

মেয়েটা বলে— ‘রাতের বেলা এভাবে কেউ বীচ দেখতে যায় মা?’

হাসতে হাসতে বলি, ‘যায় মা। মাঝে মাঝে গভীর রাতে একটা গোল্ডেন আওয়ারে সমুদ্রের পানি নীল আর বেগুনী রঙের মাঝামাঝি একটা রঙ ধারণ করে। কখন সেটা হবে তা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। এই অদ্ভুত জিনিসটা দেখার জন্যই অপেক্ষা করছি…এরজন্য আমাকে শিরদাঁড়া খাড়া করে অপলক দৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে কঠিন সাধনা করতে হবে…’

মেয়েটা কী বুঝে জানিনা, একসময় আবিষ্কার করি, সে-ও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

Tags

11 Responses

  1. তুমি খুব ভাল লেখো।বরাবরের মতই মুগ্ধতা নিয়ে পড়লাম। কি হলো অনুর!

    • আপনার লেখা বরাবরই আমি পড়ি।খুব ভালো লিখেন আপনি। আপনার লেখার হাতের জন্য শুভকামনা রইলো।

  2. Great article! I really appreciate the clear and detailed insights you’ve provided on this topic. It’s always refreshing to read content that breaks things down so well, making it easy for readers to grasp even complex ideas. I also found the practical tips you’ve shared to be very helpful. Looking forward to more informative posts like this! Keep up the good work!

  3. أنابيب المطاط المتاحة أيضًا في مصنع إيليت بايب مصممة لتحمل الظروف القاسية، حيث توفر مرونة استثنائية ومتانة. هذه الأنابيب مثالية للتطبيقات التي تتطلب مقاومة للتآكل والمواد الكيميائية ودرجات الحرارة المتفاوتة. كأحد أفضل المصانع وأكثرها موثوقية في العراق، نضمن أن أنابيب المطاط لدينا تلتزم بأعلى معايير الأداء والسلامة. اكتشف المزيد عن منتجاتنا على elitepipeiraq.com.

  4. Keep up the fantastic work! Kalorifer Sobası odun, kömür, pelet gibi yakıtlarla çalışan ve ısıtma işlevi gören bir soba türüdür. Kalorifer Sobası içindeki yakıtın yanmasıyla oluşan ısıyı doğrudan çevresine yayar ve aynı zamanda suyun ısınmasını sağlar.

  5. Keep up the fantastic work! Kalorifer Sobası odun, kömür, pelet gibi yakıtlarla çalışan ve ısıtma işlevi gören bir soba türüdür. Kalorifer Sobası içindeki yakıtın yanmasıyla oluşan ısıyı doğrudan çevresine yayar ve aynı zamanda suyun ısınmasını sağlar.

  6. Keep up the fantastic work! Kalorifer Sobası odun, kömür, pelet gibi yakıtlarla çalışan ve ısıtma işlevi gören bir soba türüdür. Kalorifer Sobası içindeki yakıtın yanmasıyla oluşan ısıyı doğrudan çevresine yayar ve aynı zamanda suyun ısınmasını sağlar.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *