গল্পটা একজন আকরাম সাহেবের; যে সদ্য গড়া একটি দ্বিতল ভবনের মালিক, কিংবা তার স্ত্রী রত্নার , বা তাদের আট বছর বয়সী ছেলে বশিরের । গল্পটা হতে পারে তাদের বাসার নতুন ভাড়াটিয়া শীলার, বা তার সম্প্রতি চাকরি ছাটাইকৃত স্বামী রফিকেরও। অথবা হতে পারে, গল্পটি নেহায়েতই একজন আইসক্রিমওয়ালার, যে দিনরাত একটি অতিদীর্ঘ জীবন কামনা করে।
গ্রীষ্মের কড়কড়ে এক দুপুর ।
গাছের পাতা নড়ে , কিন্তু বাতাসের অস্ত্বিত্ব নেই।
এরকম দুপুরে  আইসক্রিমওয়ালা আইসক্রীম বেঁচতে বেঁচতে এক গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে কমদামী আইসক্রীমে গলা ভেজায় । শক্তি জড়ো করে আবার চিৎকার শুরু করে …‘আইস…কি…রি…ম...’ বলে। সাথে হাতে নড়েচড়ে ওঠে একটি ঘণ্টা , যা ছিলো তার বাপের। বাজানোর সময় সাবধান থাকতে হয় আইসক্রীমওয়ালার। ছেলের হাতে ভাঙাচোরা জিনিস তুলে দেওয়া পছন্দ না তার । অনেকেই বলে ছেলেকে পড়ালেখা করাতে ,কিন্তু এই জিনিসটার উপর আইস্ক্রিমওয়ালার বিশ্বাস নেই । তার বাপ একবার বলেছিলো ,পড়ালেখা করলে হায়াত কমে যায় । চোখ বন্ধ করে সে বাপের কথা বিশ্বাস করেছে । তার প্রমাণও অবশ্য পেয়েছে।
তার দাদা মারা যায় একশো ছয় বছর বয়সে। তার বাপ যখন মারা যায়,তখন তার বয়স  আটানব্বই বছর । আইসক্রীমওয়ালা দীর্ঘ জীবনের প্রলোভনে  ছেলেকে বইখাতা ধরতে দিলো না। ততদিনে তার বিশ্বাস আরো পাকাপোক্ত হয়েছে ,ছড়িয়ে গেছে চুল থেকে মেটাটার্সাল পর্যন্ত। বুকভরা বিশ্বাস আর দীর্ঘজীবনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে একরাতে আইসক্রিমওয়ালা ম্যালেরিয়া জ্বরে কাতরাতে কাতরাতে মারা গেলো৷ লোকটা মারা গেলো তৃষ্ণার্ত অবস্থায়। তখন তার বয়স মাত্র বিয়াল্লিশ বছর। মরার আগে তার অসুস্থ বউয়ের কাছে একটু পানি চাইলো। বউ বিছানা থেকে উঠতে পারে না। সে ডাকলো তার ছেলেকে। তখন মধ্যরাত, ছোটো ছেলেটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। যখন সে টের পেলো তাকে কেউ ডাকছে, ততক্ষণে তার বাপ এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে৷
সামান্য আইসক্রিমওয়ালার মৃত্যুতে একটা কাকপক্ষী নড়লো না, কেউ কালো ব্যাজ পরিধান করলো না, ছেলেটার কাঁধ চাপড়ে কেউ একটু সাহস দিলো না। অবশ্য এ নিয়ে আইসক্রিমওয়ালার বারোমাসী অসুস্থ স্ত্রী কিংবা পুত্রের তেমন আক্ষেপ নেই। তারা জানে, ঈশ্বর ঘোরাঘুরি করেন ভদ্রপল্লীতে। দরিদ্র এলাকায় তার যাওয়া আসা নেই বললেই চলে। বিলম্ব না করে বালক তুলে নিলো বাপের ফেলে যাওয়া ঘণ্টা আর আইস্ক্রীমের সাদা বাক্স।আইসক্রিমের বাক্সটা দেখলের বুকের কোথায় যেনো একটু মোচড় দেয় ছেলেটার। রাতের বেলা ঘুমানোর আগে কোনো দিন হয়তো বাক্সের গায়ে  হাত বুলায়। তার মনে হয় সে বাপজানের গায়ের হাত বুলাচ্ছে৷ চোখ ফেটে কান্না আসে তার। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে, আহ বাজান!
দিনের বেলা বাপের চিরাচরিত দেখানো পথে পুত্র হেঁটে  যায় । ঘণ্টার আওয়াজে দৌড়ে আসে কিছু বাচ্চা , দুয়েকটা গিন্নী কিংবা সদ্য ফুটন্ত কিশোরী । এদের কেউ কেউ রাস্তায় এসে প্রথমে তাকায় ক্ষুদ্র আইস্ক্রীমওয়ালার বাক্সের দিকে, এরপর হাতের মুষ্টিতে থাকা কয়েক আনা পয়সার দিকে । দুই-একজনের হয়তো নজরে পড়ে মাঝবয়স্ক আইসক্রীমওয়ালার পরিবর্তে নতুন আসা ছোটো ছেলের মুখটা। এই মানুষগুলোর ইচ্ছা কিংবা শখ বলতে কিছু নেই । দিন আনে দিন খায়, একটা চটের ছালা বিছিয়ে বছরের পর বছর কাটায়। আইসক্রীম এদের কাছে নিতান্ত বিলাসী বস্তু ।
চারদিকে নেতার ছড়াছড়ি। গরীবদের মধ্যেও নেতা থাকবে না, এ কি করে হয়? তাদের কেউ কেউ হয়তো আইসক্রিমওয়ালাকে ডাক দেয়, বাকিরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।
তাদের দৃষ্টিতে থাকে ঈর্ষা, কিংবা আক্ষেপ। ঈর্ষা আক্ষেপের দুষ্টচক্রে যখন সে লড়ছে, নেতা কিংবা গরীবের ধনীর কাছে সে দৃশ্য উপভোগ্য হয়ে দাঁড়ায়।
কিংবা,  বাক্সের দিকে তাকিয়ে থাকা চোখজোড়ার সামনে দিয়ে ষোড়শী তরুণী লাল লম্বা আইসক্রীমটাতে জিহবা লাগায়। সে মিটিমিটি হাসে। একটু অশ্লীল আর মোহনীয় সেই হাসি। কাল রাতের কাস্টমার বেশ মালদার ছিলো৷ তার কল্যাণে আজ হাত বেশ ভারী। তার হাসিতে চোখ ট্যারা হয়ে যায় কোনো যুবকের, একটু কাছে যাবার চেষ্টায় হয়তো ছোঁকছোঁক করে।  তরুনী একটু কায়দা করে বুকের দিকে শাড়িটা সরিয়ে দেয়। বন্য কুকুরের মতো লালা ঝরতে থাকে যুবকের জিভ গড়িয়ে।
এই দৃশ্য সবার চোখ এড়ায় না। হয়তো দেখে ফেলে  দরিদ্র কোনো গিন্নী। হতে পারে সে কোনো ইস্কুল মাস্টারের বউ, কিংবা কুমড়াচাষীর।  নিজের শরীরে যৌবনের অনুপস্থিতি টের পেয়ে তার শরীরে হয়তো জ্বলুনি ধরে।  ভাঙা দরজায় খিল দিতে দিতে সে  অত্যুক্তি করে ওঠে, “নষ্টা কোনহানকার….!”
এসবের কোনো কিছুই চোখে পড়েনা শিশু আইস্ক্রীম বিক্রেতার। সে আপনমনে চলছে নিজ গতিতে, খানিক বিষণ্ণ, খানিক ক্লান্ত। মাঝেমাঝে তার বাবার জন্য পরান কেমন জানি করে। জামার হাতায় চোখ মুছে সে।
এই রাস্তাটার ধারেই একটা নতুন দুই তলা বাসা ।  বিছানায় শুয়ে নিজের ভুরির ওঠানামা দেখছিলো আকরাম উদ্দিন। দুপুরে ভাত খাওয়ার পর ঘুমঘুম আসে প্রতিদিন ,শরীরটা অস্বাভাবিক ভারী লাগে। ঘুমিয়েই পড়েছিলো বোধহয়। রেশটা কেটে গেলো বউয়ের ডাকে।
ছাদেত্তুন শুকনা কাপড়ডি আনা লাগবো..’ 
বিরক্ত হলেও কথা বাড়ায় না আকরাম। মেয়েলোকের সাথে বাড়তি কথা মানেই ঝামে্লা। বিছানা ছেড়ে ছাদের উদ্দেশ্যে অনুগত ছাত্রের মতো পা বাড়ায় সে ।
কড়কড়ে রোদের মধ্যে চোখ কুচকে কাপড় তুলতে থাকে আকরাম উদ্দিন। মনে মনে দুটো গালি দেয় সূর্যকে। হঠাৎ লাল একটা ছোটো কাপড় দেখে তার চোখ ধীরে ধীরে বড় হয়। বিরক্তির বদলে স্থান পায় বিস্ময়। একটু কি লোভও হয়? কে জানে ।  তাদের কাপড়ের রশিতেই একটা টকটকে লাল সিল্কের অন্তর্বাস। ফিতাগুলো চকচক করছে রোদের আলোয় । এই প্রথম আকরাম উদ্দিনের কাছে রোদটা খারাপ লাগে না। এত দামী ব্রা  আগে কখনো সামনাসামনি দেখেনি আকরাম ।
কি মোলায়েম , কি মসৃণ ,কি বৃহৎ!
মনে হচ্ছে একটা সাদা বড় বিদেশী বিড়ালের গায়ে সে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । এই ছাদে এটা এলো কি করে একবার ভাবতে চায় আকরাম। রত্নার হওয়ার প্রশ্নই আসে না। রত্নাকে সবসময় সুতি  অন্তর্বাস পরতে দেখেছে। ঢলঢলে সুতি কাপড়ের ব্রা। তাদের জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া থাকে, ফিতাতে গিট দেওয়া থাকে। মেজাজ ভালো থাকলে তখন অবশ্য ঘামের চটচটে গন্ধওয়ালা রত্নার শরীরে সুতি ব্রা এতো খারাপ লাগে না । রত্নার কথা ভাবা বাদ দিয়ে আকরাম আবার হাত দেয় তুলতুলে মসৃণ জিনিসটাতে ।
নতুন ভাড়াটিয়ার কি হতে পারে?
তাছাড়া এই বাসায় এই ভাড়াটিয়া ছাড়া অন্য কোনো মহিলা আপাতত নেই। নিচের তলা এখনো ভাড়া হয়নি। দো’তলায় তাদের পাশেই উঠেছে একজোড়া স্বামী-স্ত্রী। মেয়েটার কি যেনো নাম? শীলা বোধহয়, ভাবেসাবেও মনে হয় বড়লোকের ঝি । এত দামী তুলতুলে অন্তর্বাস পড়লেও অবাক হবার কিছু নেই ।
শীলাকে মাত্র দু’দিন দেখেছে সে। কল্পনায় ভেসে ওঠে নরম ছোট্ট কাপড় পরা ভাড়াটিয়ার সাদা দেহ। কিছুটা কি বিদেশীদের মতো?  মুহূর্তের জন্য আকরাম কিছুটা অপরাধবোধে ভোগে। এসব কি ভাবছে সে? সে রত্নাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে । এখন আগের মতো ভালো না লাগলেও  রত্নাকে সে চিন্তার বাইরে রাখতে পারে না।
আবার এই মসৃণ জিনিসটা ছাদে ফেলেও যেতে ইচ্ছে করছে না । আবার নিয়ে যাবেই বা কিভাবে? এর উপর কোনো অধিকার তার নেই। ভুল করে হয়তো শীলা বা তার স্বামী এই রশিতে নেড়ে দিয়েছে। হয়না এমন?

নির্লোভভাবে আকরাম ফিরে যায় লাল জিনিসটাকে একা ফেলে ।
গনগনে রোদে পুরো ছাদে একা বসে আছে কাপড়টা। মনে হচ্ছে সারা ছাদে একটি মাত্র লাল মৌটুসি পাখি বসে আছে। তাকে ডাকছে হাতছানি দিয়ে।  একটু কি মায়া লাগে তার?  সিড়ির কাছে আসতেই বেঁকে বসে আকরাম। তড়িতাহতের মতো সিদ্ধান্ত বদলায়।
দুই সেকেন্ডের মধ্যে কাপড়টাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসে বাসায় । এরচেয়ে একদলা সোনা পড়ে থাকলেও না দেখার ভাব করে ফিরে আসতে পারতো , মনে মনে ভাবে আকরাম।
বাসায় ঢুকে খুব স্বাভাবিক আচরণ করার চেষ্টা করে সাইত্রিশ বছর বয়সী আকরাম নামের ফর্সা লোকটা। লাল জিনিসটা লুকিয়ে রাখতে হবে । খুব সন্তর্পনে। চোখে পড়লো সবুজ আলমিরার উপর রাখা

ডানো দুধের কৌটা। অনেকদিন ধরেই পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়। আলমিরা টা এতো উঁচু যে আকরামই নাগাল পায়না উপরে , রত্না তো অর্ধেক হবে । নিশ্চিন্তে সেখানে লাল অন্তর্বাসটা ঢুকিয়ে রাখলো । রত্না ঘুমিয়ে গেলে সে জিনিসটা বের করবে , বারবার নিরীক্ষণ করবে ,আদর করবে।

ঘড়ির দিকে তাকায় সে। সময় খুব বেশি যায়নি। এখন একটু দ্রুত হাত চালাতে হবে। আকরাম উদ্দিন একটা টুলের উপর উঠে জিনিসটাকে  আলমারীর উপর থাকা কৌটায় ঢুকায় । রত্না তখন অন্যরুমে বশিরকে খাওয়াচ্ছে। বশির তাদের একমাত্র পুত্র ৷ ক’দিন পরেই তার বয়স আট শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সে সাধারণ বাচ্চাদের মতো না। কথা বলতে পারে না, ক্ষিদা লাগলে টের পায় না, পায়খানা প্রসাব জায়গাতেই করে।  মুখ দিয়ে লালা ঝড়ে অবিরত। রত্না নিজের সন্তানকে ভালো না বেসে পারে না, আবার এই কষ্ট সহ্য করাও ভীষণ কঠিন৷ দিনের বেশিরভাগ সময়ই যায় বশিরের পায়খানা প্রসাব পরিষ্কার করতে ৷ মাঝেমাঝে রত্না হাউমাউ করে কাঁদে।
বশির কি বুঝে কে জানে,মায়ের কান্নার দৃশ্য দেখে সে হিংস্র হয়ে যায়। মুখ দিয়ে ‘গোঁ গোঁ’ ধরনের শব্দ বের হয়৷
রত্না বশিরকে খাওয়ানোর সময়ই আকরামের কাজ শেষ হয়ে যায়। শেষমূহুর্তে নামার সময় হাতের ধাক্কা লেগে আলমারির উপর থেকে কি যেন পড়ে গেলো । আলমারির উপর জিনিস রাখা মেয়েদের স্বভাব । পৃথিবীর সকল মেয়েকুলকে একচোট গালি দেয় সে। মেঝেতে অনেকক্ষণ হাতড়ে দেখলো আলমারির উপর কিছু পিন রাখা ছিলো, সেগুলোই হাতের ধাক্কায় পড়েছে । আকরাম তড়িঘরি করে পিনগুলোকে সরিয়ে রাখলো । যে কোনো সময় রত্না চলে আসতে পারে । নিঃশ্বাস বন্ধ করে কাজটা করে ফেললো সে । এত সহজে জিনিসটা পার পেয়ে যাবে ,আকরাম উদ্দিন বুঝতে পারেনি । বিছানায় শুয়ে সে কখন  ঘুমিয়ে পড়লো নিজেও জানেনা ।
তখন বিকাল নেমে গেছে । সন্ধ্যা আসি আসি করছে ।
আকরাম উদ্দিনের ঘুম ভাঙলো রত্নার ধাক্কায় । রত্না কাঁদছে । আকরাম কি কিছুটা ভয় পেলো?
“কি হৈছে? কান্দো কা?
“বশির কি জানি খাইয়া ফালাইছে। চোখ মুখ উল্টায়া পইড়া আছে। গলাত আটকায়া আছে মনে হয়, তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিতে হইব” 
আকরামের মাথায় ঢুকলো না । কি খেতে পারে বশির?
“একটু দেইখ্যা রাখতে পারো না তয় সারাদিন করোটা কি?”, খেকিয়ে উঠলো সে।
তাড়াতাড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলো হঠাৎ বিপদমুখী বাপ মা। বাইরে রত্না কাঁদছে ৷ আকরাম বসে আছে ভ্রু কুঁচকে। ইমার্জেন্সিতে নেওয়ার ঘণ্টাদুয়েক পর ডাক্তার বের হয়ে আসলো। ডাক্তার জানালো, ভেতরে পিন সাইজের কিছু একটা ঢুকেছে। ইসোফেগাল পারফোরেশনে প্রচুর ইন্টার্নাল ব্লিডিং হচ্ছে। অবস্থা কতটুকু গুরুতর হয় বলা যাচ্ছে না। এক্ষুনি অপারেশন করতে হবে৷ ডাক্তারের কোন কথাই আকরাম বুঝলো না। শুধু ‘পিন’ শব্দটা শুনে তার আত্মাটা ধক করে উঠলো। আকরাম তার কল্পনাশক্তি দ্বারা পিনের উৎপত্তি ও প্রসার বুঝতে পারলো।
“পিন আইবো কোথথেইকা? মিছা কথা কইতেছে” ,রত্না থমথমে গলায় বললো ।
“আ্যাঁই বশিরের বাপ…কথা কও না ক্যান?” কনুইয়ের গুতায় আকরামের খেয়াল হলো রত্না কিছু বলছে। সে কোনো উত্তর দিতে পারছে না, ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে।  অনেক কষ্টে ভাঙা গলায় উত্তর দিলো, “কথা ঠিক, পিন কই পাইব আমার ব্যাটা….” 
চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো আকরাম। বিয়ের ১০ বছরের মধ্যে এভাবে তাকে কাঁদতে দেখেনি রত্না। বরং সে বশিরের পাশে সময় কাটাতে কখনোই অত আগ্রহী ছিলো না, অন্তত যখন থেকে সে বুঝতে পেরেছে ছেলেটা প্রতিবন্ধী। রত্নার তার স্বামীর জন্যও খারাপ লাগছে ভীষণ। পুত্রস্নেহে বেহুশের মতো কাঁদছে লোকটা৷
বশিরকে শেষপর্যন্ত বাঁচানো গেলো না৷ রত্না চিৎকার করে হাসপাতালের করিডোরের এক মাথা থেকে অন্য মাথায় ছুটতে লাগলো । ছেলের পেছনে এতো খাটনি, তবু তাকে হাত ছাড়া করতে চায় না মায়ের মন। কত কেঁদেছে এই ছেলেটার জন্য সে! কাঁদতে কাঁদতেই সে ভালোবেসেছে, মায়ায় জড়িয়েছে।
পিনটা তার  গলা অবধি নেমে স্টোমাকেও প্রচুর পারফোরেট করেছে। এসব কিছু না বুঝলেও আকরাম বুঝতে পেরেছে মৃত্যুর পেছনে তার বড় একটা হাত আছে৷ আকরাম বেহুশের মতো হাউমাউ করে কাঁদছে হাসপাতালের মেঝেতে বসে।
কবর দিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত বাজে তখন চারটা। পুত্রবিদায়ে চোখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে দুজন বাবা-মার। নূন্যতম শক্তিও এখন অবশিষ্ট নেই। আকরাম উদ্দিন একটু পর পর ফোঁপাচ্ছেন। তার ইচ্ছে করছে এক্ষুনি লাল অন্তর্বাস টা পোড়াতে।
কিন্তু এখন উপযুক্ত সময় নয়, বরং এতে ঝামেলা আরও বাড়বে। টানা পাঁচদিন না ঘুমিয়ে কাটানোর পর ষষ্ঠ দিন রত্নার চোখ বন্ধ হয়ে আসলো। গভীর ঘুমে মগ্নতা টের পেয়ে আলমিরার উপর থেকে বাক্সটা নামালো আকরাম।
তাকিয়ে রইলো জিনিসটার দিকে। এখন আর আবেদন কাজ করছে না কোনোকিছুর প্রতি, নিজেকে কামনা বাসনাহীন নপুংসকের মতো মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে সে ঠিক করলো জিনিসটা ফিরিয়ে দেবার।
রত্না তখনো গভীর ঘুমে। শুকনা দেহটা নিথর হয়ে পড়ে আছে বিছানার কোনায়। খুব ধীর গতিতে শ্বাস নিচ্ছে রত্না। দাগভর্তি শ্যামলা মুখটার দিকে তাকাতে এখন আকরামের অপরাধবোধ হয়। বুকে কাঁপন ধরে।
প্যান্টের পকেটে অন্তর্বাস টা ঢুকিয়ে সে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। এর থেকে নিষ্পত্তি চায় সে। আড়চোখে দেখে নিলো ভাড়াটিয়ার দরজাটা। বড় একটা তালা ঝুলছে।
একসময় তো খুলবোই, তখন ফিক্কা মারলেই হইবো, নিজেকে আশস্ত করে আকরাম।
বাসা থেকে বের নিরুদ্দেশভাবে হাঁটা শুরু করলো লোকটি। কোনো গন্তব্য নেই, কোনো উদ্দেশ্য নেই, শুধু হাঁটছে। চোখ পড়লো এক বালক আইসক্রিমওয়ালার উপর, যার বক্ষের চেয়ে আইসক্রিমের বাক্স বড়। চোখগুলো ছলছল করছে , মনে হচ্ছে এক্ষুনি বাক্স ধড়াস করে ফেলে দৌড়ে গিয়ে মায়ের কোলে আছড়ে পড়বে।
এই ছেলেটাকে আকরামের চেনা চেনা লাগলো। কোথায় দেখেছে তার স্মৃতি হাতড়াতে যেয়ে মনে পড়লো বালকের বাপের কথা। একবার আইসক্রিমে ময়লা পাওয়ায় তাকে বেধড়ক চড় দিয়েছিলো আকরাম। সাথে এই ছেলেটা ছিলো সেদিন, অনেকবার তাকে আটকানোর চেষ্টা করেছে।
“ঐ পোলা, একটা আইসক্রিম দে। ময়লা থাকলে মাইর খাবি কইলাম..” আকরাম রুক্ষ কন্ঠে বললো।
“কোনডা দিমু?”
“হলুদটা দে। কতো?” 
“৫ টাকা” 
“তোর বাপ আসে নাই ক্যান? পিচ্চি পোলারে এতো বড় বাক্স দিয়া পাঠায়া দিলো..”
“মইরা গেছে”,  একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বোধহয় উত্তরের সাথে৷
 ছেলেটার সাথে আকরাম উদ্দিন  কোথায় যেনো নিজের মিল পেলো। সে মিল কিসের, আকরাম নিজেও জানে না। সে বুকের চিনচিনে ব্যাথাটা টের পাচ্ছে। বশিরের কথা মনে পড়ছে আবার। ইদানীং বশিরের কথা মনে হলে বুক ধড়ফড় করে। আকরাম ছেলেটার হাতে ১০০ টাকার দুইটা নোট দিলো। চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো কিশোর।
“এতো বড় নোট ভাংতি নাই ছার” 
“পুরাডাই তোর৷ থুইয়া দে” 
 প্রথমে গাই গুই করলেও ছেলেটা শেষে মানা করলো না। পেটের কষ্ট কি জিনিস বাপ মরার পর সে বুঝতে শুরু করেছে। আকরাম উদ্দিন নিজের কাজে অবাক হয়ে গেলো। পকেট থেকে অযথা পাঁচ টাকা কেউ খোয়াতে পারে না তার, আজ কিভাবে সুড়ুৎ করে ২০০ টাকা বেরিয়ে গেলো!
আকরাম উদ্দিন যখন বাসায় ফিরলো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ভাড়াটিয়ার দরজা খোলা। এবার আর আড়চোখে না, ভালোভাবে তাকালো ভেতরে। বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। শীলার স্বামী রফিকের বাসায় ফিরতে এগারোটা বাজে। শীলাই হয়তো ফিরেছে। আকরাম খুব দ্রুত অন্তর্বাসটা বের করে ভেতরে ছুড়ে মারে।  দেয়ালঘেষে সোফার চিপায় যেয়ে পড়ে বোধহয়। তাতে আকরামের কিছু যায় আসে না। বোঝামুক্তির আনন্দে সে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
রত্না তখনো গভীর ঘুমে।
সেদিন রফিক বাসায় ফিরলো সাড়ে দশটার দিকে। এক কেমিক্যাল গোডাউনে নতুন চাকরি শুরু করেছে সে । অসময়ে ওষুধ কোম্পানির চাকরি থেকে ছাটাই হওয়ায় দুর্দশার মুখে পড়েছে দু’জনই।মাইনে সামান্যই, কষ্টেসৃষ্টে যে কয়দিন কাটানো যায়, তাতেই শুকরিয়া।
 শীলার স্টুডেন্ট লাইফের কিছু জমানো টাকা ছিলো। আজকে ব্যাংক থেকে সেটাও তুলে আনলো, তা নাহলে এই মাসের বাজার খরচ বলতে কিছুই নেই। বাসায় ঢুকতেই রফিকের পায়ের তলা কিচকিচ করে উঠলো। মনে হচ্ছে অনেকদিন এই বাসা ঝাড়ু দেওয়া হয় না। এমনিতেও রফিকের একটু শুচিবায়ু মতন আছে, ঘরে ঢুকেই এই অবস্থা দেখে মেজাজটা চরমে উঠে গেলো।
“ঘর ঝাড়ু দাও না কতদিন? কি বিশ্রী অবস্থা.. ” 
“শাক কিনছি আজকে দুই মুঠা, বাছতে গিয়ে দেখি এত বালু। পরে আর ঝাড়ু দেওয়া হয় নাই ” 
“ঝাড়ু কই?” রফিক খিটখিট করে জিজ্ঞেস করলো।
“আমি দিচ্ছি, তোমার দিতে হবে না ” 
রফিক চোখ রগড়ে নিজেই ঝাড়ু খুঁজে বের করলো। প্যান্ট বদলে ঝাড়ু দেওয়া শুরু করলো। সোফার নিচে ঝাড়ু দিতে যেয়ে ঝাড়ুর মাথায় কি যেনো একটা ঠেকলো রফিকের। টেনে আনতেই দেখে লাল ছোটো কিছু একটা। কাছে নিয়ে দেখে টকটকে লাল একটা অন্তর্বাস।
অপরিচিত জিনিস দেখে রফিকের মাথাটা ধপ করে উঠলো।
শীলাকে কি  পড়তে দেখেছে এটা? মনে পড়ছে না তো!
নতুন কিনেছে? কখন কিনলো? মার্কেটে গেলেও দু’জন একসাথে যায়৷ আর এই অভাবের সময় এসব কেনার প্রশ্নই আসে না। রফিকের মাথা কাজ করছে না।
তবে কি কেউ দিয়েছে? কেউ কি এসেছিলো বাসায়?
এ প্রশ্ন মনে আসতেই রফিকের মনে হলো তার সারা শরীরে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। দাউদাউ করে পুড়ছে সে আগুনে।
চুলের মুঠি ধরে শীলাকে টানতে টানতে নিয়ে আসলো সোফার সামনে।
“এইটা কি মাগী? কার এইটা?”
“চুল ছাড়ো রফিক। উফ,লাগছে খুব”
” এইটা কই পাইছস মাগী, সত্যি কথা বল “
শীলা অবাক হয়ে যাচ্ছে সবকিছুতে, কিছুই বুঝতে পারছে না কি ঘটছে আশেপাশে৷
“আমি কি করে জানবো? এটা আমার না” একথা বলে শীলাই একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। আসলেই তো, কোত্থেকে এলো এটা?
রফিকের চোখগুলো টকটকে লাল হয়ে আছে। হিংস্র পশুর মতো আগুনের হলকা দেখা যাচ্ছে।
“তুই জানস না খানকির বেটি? তোর বাসায়, আর তুই জানস না। কে আসছিলো বল…” 
“কসম রফিক, আমার কথা একটু শোনো..” 
রফিক কোনো কথা শুনলো না। সে রাতে শীলাকে প্রচন্ড মারলো রফিক। পুরোটা সময় শীলা অপেক্ষা করছিলো রফিকের ক্লান্ত হবার। রাত তিনটার দিকে বুনো রফিক ক্লান্ত হয়ে যখন  ঘুমাতে গেলো, শীলা তখনো কাঁপছে। উত্থালপাথাল জ্বরের আভাস পাচ্ছে শীলা। এরপরে কোনো কিছু আর মনে নেই…
যখন জ্ঞান ফিরলো মাথার কাছে একজন নারীমূর্তিকে টের পেলো সে। জানালা দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করছে। শীলা হাত পা নাড়াতে পারছে না ব্যাথায়। রত্নার মন এখন ভীষণ নরম, ছেলে হারানোর কষ্টে তাকে দেখাচ্ছে প্রাণবিহীন, কাঠের মূর্তির মতো।
“উইঠো না বইন, এর জ্বর ক্যামনে আইলো? তুমি হাঁ করো, একটু সাগু খাওয়াইয়া দেই” 
রত্না কাথার নিচে হাত পা ঢুকিয়ে অনেক কষ্টে মুখ হাঁ করলো একটু। সারা হাত ভর্তি মারের দাগ, কিছু  জায়গা থেতলেও গিয়েছে বোধহয়। রফিকের সাথে তার বিশ্রী স্মৃতির ভাগীদার  কাউকে করার ইচ্ছে নেই।
রত্না বসেই রইলো মেয়েটার কাছে। স্যুপ দেয় একটু পরপর, ডাবের পানি আনিয়েছে কোথা থেকে। সন্ধ্যার দিকে শীলা একটু ভালো বোধ করলো। রত্না পুরাটা সময় সাথেই ছিলো। অবস্থা দেখে সে বললো,
“বইন তুমি একটু বও, আমি গোসলডা সাইরা আসি”
শীলা মাথা নাড়লো।
রত্না উঠে যাবার সময় তার চোখ পড়লো সোফার একটু পাশে। মেঝেতে একটা লাল অন্তর্বাস পড়ে আছে। খুব অযাতিত, অবহেলিত মনে হলো কাপড়ের টুকরোটাকে। রত্নার মনে পড়লো বেশ কয়েকদিন আগে সে অনেক শখ করে ৬০০ টাকা দিয়ে একদম একই রকম একটা অন্তর্বাস কিনেছে।
শীলা খেয়াল করলো রত্নার চাহনি। নিজ থেকেই বললো,
“এটা আমার না, কেমনে জানি এসে পড়ছে এখানে। বিড়ালটা মনে হয় এই কাজ করছে…”
রত্না এগিয়ে গেলো। অন্তর্বাস টা হাতে নিয়ে বললো, “আমি তো ভুইল্যাই গেছিলাম এইডার কথা। কিন্যা ধুইয়া ছাদে নাড়ছিলাম। পরে বেবাক ভুইলা গেলাম….”
মেঝে থেকে কুড়িয়ে ছোট কাপড়টা ঝেড়ে রত্না বাসায় নিয়ে গেলো। শীলা বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো গমন পথের দিকে…
.
প্রায় একমাস পরের কথা। আকরাম উদ্দিন ও রত্না বেগম বিছানায় শুয়ে আছেন। ডিম লাইট জ্বলছে। রত্নার শরীরে পাউডারের গন্ধে আকরামের বুক ভরে যাচ্ছে।  তারা আবারও স্বপ্ন দেখতে চান একটি সন্তানের। যাকে দেখে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বশিরকে ভুলে থাকতে পারবেন।
গভীর রাত তখন। আকরামউদ্দিন মুখ গুঁজে আছে রত্নার বুকে। চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে সর্বস্ব। তার হাতটা ধীরে এগিয়ে গেলো রত্নার ম্যাক্সির বোতামের দিকে।  একটা একটা করে সবগুলো খোলা শেষ। রত্না তখন প্রায় উন্মোচিত, অপেক্ষা করছে আকরামের ভালোবাসা নিংড়ে নেবার।
‘উঃ’
‘খুলো না’, ফিসফিস করে বললো আকরাম।
‘তুমি খুলো..’ দুষ্টু হাসি দিয়ে রত্না উত্তর দেয়।
আকরামের আঙুলগুলো এগিয়ে যায়। হঠাৎ তার হাতে আটকালো মোলায়েম একটা অন্তর্বাস, মসৃণ তার ফিতা। আকরামের হঠাৎ ভয় ভয় লাগলো ৷ সন্ত্রস্ত মনে সে ব্রা’র হুক খুললো। ছোট জিনিসটা তখন তার হাতে, তবুও খচখচানিটা ভাবটা যাচ্ছে না। রত্নার স্তনজোড়াকে স্বাভাবিকের চেয়ে আজ ভারী মনে হচ্ছে..
হুট করেদৌড়ে গিয়ে  আকরাম সুইচটা জ্বালালো।
রত্না বিছানায় শুয়ে একটু বিরক্তই হলো বলা যায়।
“লাইট জ্বালাইলেন ক্যান? বন্ধ করেন..” 
আকরাম কোনো কথা বললো না।
“আরে হইলো কি,বন্ধ করেন লাইট….” বলেই রত্না অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো স্বামীর দিকে। আকরাম উদ্দিনের রক্তশূণ্য মুখ তাকিয়ে আছে নিজের হাতের দিকে। সেখানে একটা লাল অন্তর্বাস। নরম, মসৃণ, বৃহৎ! ভীত চোখগুলো যেন অস্ত্র দেখছে…
এদিকে রত্না ডেকেই যাচ্ছে,“কি হইলো…আসেন না ক্যান?…অ্যাঁইইই বশিরের বাপ….”
Tags

4,201 Responses

  1. Keep up the fantastic work! Kalorifer Sobası odun, kömür, pelet gibi yakıtlarla çalışan ve ısıtma işlevi gören bir soba türüdür. Kalorifer Sobası içindeki yakıtın yanmasıyla oluşan ısıyı doğrudan çevresine yayar ve aynı zamanda suyun ısınmasını sağlar.

  2. farmacia senza ricetta recensioni: Viagra – kamagra senza ricetta in farmacia
    Farmacie on line spedizione gratuita