একটা মজার গল্প দিয়ে শুরু করি।

প্রযুক্তিগত উন্নতির দরুন মোবাইলের মত মানুষেরও মেমরী আপডেট করা সম্ভব হচ্ছে । এখন আর মানুষ এত পড়াশুনা করে না । প্রয়োজন মত মেমরী কিনে লাগিয়ে নেয় ।

এই উদ্দেশ্যে এক লোক গেছেন মেমোরী কিনতে । নিজের সাধ্যমত মেমরী কিনবেন এই আশায় ।

দোকানে কাচের মধ্যে সাজানো বিভিন্ন দামের এবং মানের মেমরী ।

বিজ্ঞানীদের মেমরী মাত্র একশ ডলার।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের মেমরী তিনশ ডলার ।
রাজনীতিবিদদের মেমরী একহাজার ডলার ।

লোকটা বেজায় সমস্যায় পড়লেন। বিজ্ঞানীদের মেমরী এত কম দাম আবার রাজনীতিবিদদের মেমরী এত দাম কেন ?

এবারে তিনি কোম্পানির হেল্পলাইনে গেলেন ব্যাপারটা খোলাসা করে জানার জন্য ।

অপারেটর জানালো, “বিজ্ঞানীদের মেমরী দাম সবচেয়ে কম কারণ এরা সারাজীবন গবেষণা করতে করতে মেমরি প্রায় সবটুকুই শেষ করে ফেলেছেন। সুতরাং ওটা আপনি বেশীদিন ব্যাবহার করতে পারবেন না ।

ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার , এরা জীবনভর পড়াশোনা আর কাজ নিয়েই পড়েছিলেন তাই মেমরির প্রায় অর্ধেক শেষ করে ফেলেছেন তাই দাম মধ্য মানের।”

“আর রাজনীতিবিদের মেমরীর দাম এত বেশী কেন ?”, লোকটি প্রশ্ন করলেন।

“সহজ হিসাব স্যার। এরা নিজের মেমরির এক পারসেন্ট ও ব্যবহার করেছে কিনা সন্দেহ আছে । মেমরি একবারে ইনট্যাক্ট। তাই দাম তো বেশী হবেই।”

 

ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আশেপাশে খুব তোলপাড় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক দিন আগে মাথায় ঘুরপাক খাওয়া কিছু কথা আবার উঁকি দিলো।

একবার এক আপু আমাকে বলেছিলেন, “তুমি মেডিকেলে পড়ো? দেখে মনে হয় বিইউপি তে পড়ো।”

আমার আম্মা আমার এক বন্ধুর ছবি দেখে বললেন, “দেখেই মনে হচ্ছে মদ, গাঁঞ্জা খায় ” (অথচ বন্ধু বিড়িও খায় না)

আবার একইভাবে কপালে বড় টিপ, হাতাকাটা ব্লাউজ পরিহিতা, নারী স্বাধীনতা নিয়ে বড় বড় স্ট্যাটাস দেওয়া মেয়েদেরকে ‘দেখেই মনে হয়’ ফেমিনিস্ট।

সমস্যা হচ্ছে “দেখেই মনে হওয়া” জিনিসগুলো নিয়ে। যতদিন না পর্যন্ত ‘দেখেই মনে হওয়া’ জিনিসগুলো বর্জন করতে পারবো, ততদিন বাঁধার সম্মুখীন হতেই হবে।

অনেক মানুষকে জানি যারা ঘুমের মধ্যেও ছাত্রলীগের স্লোগান আওড়ান। ‘দেখেই মনে হয়’ অনেক বড় নেতা। বড় ভাইদের পিছে ঘুরে ঘুরে আর ‘সহমত ভাই’ বলে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে মাথা এখন আর সোজা রাখতে পারছেন না।

হুমায়ূন আজাদের ভাষায় বললে, “বাঙলাদেশে কয়েকটি নতুন শাস্ত্রের উদ্ভব ঘটেছে। এগুলো হচ্ছে স্তুতিবিজ্ঞান, স্তব সাহিত্য, সুবিধা দর্শন ও নমস্কার তত্ত্ব।”

এই শাস্ত্রের প্রতিফলন দেখতে পাই একটা বড় অংশের ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে। নীতি নিষ্ঠাবান যে নেই —এ কথা বলছি না। তবে বড়ই অভাব!

এক বুদ্ধিজীবী ভাইয়ের সত্যি ঘটনা বলি। ভাইকে সবসময় দেখি রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে ব্যস্ত।

এসো নবীন ভয় নাই, ছাত্রলীগে সন্ত্রাস নাই।”

কিংবা

“বই খাতা কলম নিন, ছাত্রলীগে যোগ দিন।” — স্লোগানে তার কন্ঠে কেঁপে ওঠে বাংলার আকাশ বাতাস। মাঝেমাঝে মনে হয় এই বুঝি আরেক শেখ মুজিব জন্ম নিলো! এমন উদ্দীপিত জ্ঞানী মানুষ দেখলেই ভয়ে, শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে।

একদিন ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, “এইযে পোল্যান্ডের পিআইএস দল বিরোধীদল থাকাকালীন দক্ষিণপন্থী ছিলো কিন্তু ক্ষমতায় এসে দ্বিচারিতায় যুক্ত হলো, এ ব্যাপারে আপনার কি মনে হয়?”

তিনি থতমত খেয়ে গেলেন। সহজ করে আবার জিজ্ঞেস করলাম, “ছাত্রলীগ যাত্রা শুরুর সময় সংগঠনের নাম কি ছিলো?”

রাজনীতিবিদ ভাই চুপ থাকলেন। পাশ থেকে আমার আরেকজন বান্ধবী জিজ্ঞেস করলো, “ভাই, বামপন্থী আর দক্ষিণপন্থী ব্যাপারটা বুঝায়া দেন।”

ভাই উদাস চোখে সামনে তাকিয়ে কি যে বললেন, তা শুধু নিজে বুঝলেন। ভাইয়ের তেজোদ্দীপ্ত স্লোগানের সেই কন্ঠ কই যেন পালিয়ে গেলো।

 

আমি রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত না থাকলেও রাজনীতিকে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনটা শুধু হেসে খেলে কাটিয়ে দেবার জন্য নয়। সমাজ, রাষ্ট্রকে, বিশ্বকে দেবার মতো অনেক কিছু আছে যা শুধু রাজনীতি দ্বারাই সম্ভব।

আমি বিশ্বাস করি ছাত্র রাজনীতি একজন ছাত্রকে সাহসী করে, দায়িত্বশীল করে, স্বার্থপরতার উর্ধ্বে উঠে ভাবতে শেখায়, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো নেতৃত্ব দিতে শেখায়, সহনশীল হতে শিখায়।

তাছাড়া বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির উজ্জ্বল ঐতিহ্যও রয়েছে৷ ৫২এর ভাষা আন্দোলন, ৬২এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবজনক ভূমিকা রয়েছে৷ কিন্তু ৯০ সালে স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের যে নতুন অভিযাত্রা শুরু হয়েছে, ওই সময় থেকেই শুরু হয়েছে ছাত্র রাজনীতির পচন। এই পচনের পাইপলাইন থেকে এখন আর মুক্তি মিলছে না।

 

বিভিন্ন ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক দলীয় -উপদলীয় কোন্দল নিয়েও আমরা হতাশ। ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেরি হয়, কিন্তু দলে প্রবেশ করাতে দেরি হয় না। রাজনীতির মূল শিক্ষা ব্রিফিং না দিয়ে চেনানো হয় বিপক্ষদলকে। হাশেমকে বলা হয় -” রহিম তোমার ভিন্ন পক্ষ, রহিম হইতে সাবধান!”

অথচ জিনিসগুলো আরও সুন্দর হতে পারতো। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক কুশ্রী পর্যায়ে না নিয়ে অনিন্দ্য হতে পারতো। ভেদাভেদ কমে আসতে পারতো, মতের মিল হতে পারতো। অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হতে পারতো৷

বেশিরভাগ ক্যাম্পাসেই যেন রাজনীতিতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। যারা নিরীহ গোবেচারা টাইপ, নির্দলীয় থাকতে চায় এদের উপর নেমে আসে উপরমহলের বিভিন্ন থ্রেট। “দলে না আসলে সুবিধা পাবে না, দলে না আসলে ভালো রুম পাবে না, দলে না আসলে….ইত্যাদি..”

অথচ রাজনীতি হওয়ার কথা ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত। এমন পচন কিভাবে নিয়ে একটা দেশ, পুরো ছাত্রসমাজ কিভাবে আগাবে জানি না।

রাজনীতি থেকে শুরু করে নারী উন্নয়ন হোক, আর আবহাওয়া পরিবর্তনই হোক —সবকিছুর মূলে আছে শিক্ষা। শিক্ষাই অস্ত্র, শিক্ষাই সম্পদ। এর কোনো বিকল্প নাই। রাজনীতির আদর্শ শিক্ষা দিন, উন্নতি হবে।

কেউ একজন বলেছিলেন,

কে বলেছিলেন জানিনা, তবে সত্যি কথাই বলেছিলেন।

Tags

5 Responses

  1. সুন্দর লিখেছেন।পড়তে ভালো লাগলো

  2. CPVC Pipes : A chlorinated version of PVC, CPVC pipes can handle higher temperatures. ElitePipe Factory in Iraq provides reliable CPVC pipes for hot water systems.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *