আজকে ১৩ নভেম্বর। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। এই দিনে প্রতিবছরই আমার একটু আধটু মন খারাপ থাকে। খুব ইচ্ছা ছিলো কখনো না কখনো হুমায়ূন স্যারকে স্বচক্ষে দেখবো, আরেকটু বেশি সুযোগ পেলে মাথায় চড়ে বসবো। আবদার করবো অটোগ্রাফ কিংবা ছবির জন্য। আনন্দের আতিশয্যে পদধূলি নিয়ে খুশি মনে বাসায় ফেরত আসবো। সেই স্মৃতি পরবর্তী চৌদ্দো প্রজন্মকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে শোনাতে কুন্ঠাবোধ করবো না।
কিন্তু তা আর হলো কই?
আমার বয়স যখন চৌদ্দো, তখন হুমায়ূন আহমেদ সবাইকে ফাঁকি দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কিশোরী হৃদয়ে কি পরিমাণ কষ্ট যে পেয়েছিলাম, তা অক্ষরে বোঝাবার নয়।
.
আজ সকাল থেকে আমি বসে আছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। মাঝে মাঝে কোনো কারণ ছাড়া বসে থাকতে ইচ্ছা করে, আজ আমার এমন একটি দিন। অনেক পরিপাটি মানুষের ভীড়ে নিজেকে ফকির মনে হচ্ছে। পুরাতন একটা গোলাপী কামিজ পড়ে এসেছি। স্যান্ডেল ছিঁড়ে যায় যায় অবস্থা, রুক্ষ রঙিন চুলে জটলা পাকিয়ে আধো সন্ন্যাসী হয়ে বসে আছি।
আশেপাশে বেশিরভাগই হিমু রূপা সেজেছে। কাপড় বিক্রেতাদের নীল শাড়ি হলুদ পাঞ্জাবি বেঁচে দারুণ লাভ হওয়ার কথা। শুভ্রকে দেখলাম সাদা জামার সাথে সাদা মাস্ক পড়েছে। দারুণ ইম্প্রোভাইজেশন!
বাকের ভাই গরম সিঙারা খাচ্ছে কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে। মিসির আলী আবার এদিক ওদিক কি যেন খুঁজছে।
মনে মনে ঠিক করলাম বেঁচে থাকলে পরের বছর মাজেদা খালা সেজে ঘুরে বেড়াবো। আজকাল আনকমন জিনিসের দাম বেশি।
.
আমি বসেছি একটা গাছের নিচে। একটু দূরেই এক জোড়া হিমু রূপা বসে আছে। মেয়েটার হাতে “রূপা”, আর ছেলেটার হাতে “হিমু রিমান্ডে।”
দু’জন ক্যামেরাম্যান ঝপাঝপ ছবি তুলছে।
প্রায় এক ঘন্টা পর ছবি তোলা শেষ হলো। এই মুহূর্তে কাজল টানা আয়ত চোখগুলো দেখে মেয়েটাকে ক্লান্ত মনে হচ্ছে। আমার খুব কথা বলতে ইচ্ছা হলো। অবশ্য সুন্দর মেয়ে দেখলেই আমার কথা বলতে ইচ্ছা করে, এ নতুন কিছু না।
কথা বলবো কি বলবো মনের দ্বিধা ঝেড়ে মেয়েটাকে হঠাৎ প্রশ্ন করেই ফেললাম।
— হুমায়ূন কে খুব ভালোবাসেন বুঝি?
প্রেমিক-প্রেমিকার দু’জনের নজরই তখন আমার দিকে। মুখে প্রাঞ্জল হাসি।
—হ্যাঁ, তা আর বলতে!
—সবচেয়ে প্রিয় বই কোনটা?
এবার আমার অহেতুক প্রশ্নে মেয়েটা বিরক্ত হলো। ঘুরে বসলো প্রেমিকের দিকে। আমিই কথা বাড়ালাম।
—’কৃষ্ণপক্ষ’ পড়েছেন নিশ্চয়ই?
অসম্ভব সুন্দর গল্প, একবার পড়লে ভোলা যায় না এমন।
দু’জনই সমানতালে মাথা নাড়লো, দুজনেই পড়েছে। আমি আবার বললাম,
—অরুর জন্য খুব কষ্ট হয় আমার।
তখন মেয়েটা এক অদ্ভুত প্রশ্ন করলো।
আস্তে আস্তে বললো, “অরু কে?”
আমার সন্দেহ হলো। এমন একটা ভাব করলাম যেনো মেয়েটির কথা শুনতে পাইনি।
সন্দেহ কাটাতে জিজ্ঞেস করলাম,
—হুমায়ূন আহমেদের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ একটা দারুণ বই। কি বলেন?
এবার হিমু-রূপা আগের বারের চেয়েও জোরে জোরে মাথা নাড়তে লাগলো। যার অর্থ —”অবশ্যই দারুণ বই।”
এবার প্রেমিকটি প্রেমিকাকে দেখিয়ে আমার উদ্দেশ্য বললো, “শেষ বইমেলায়ই ওকে উপহার দিলাম।”
এরপর আমি আবার যোগ করলাম, “হুমায়ূন আহমেদের
লোটাকম্বল, কপালকুণ্ডলা, মেমসাহেব” বইগুলোও অসাধারণ।
—তা আর বলতে! পাশে বসা রূপা উত্তর দিলো।
আমি হাসলাম।
নীল শাড়ি পড়া রূপা এবার আমাকে প্রশ্ন করলো, “হুমায়ূন আহমেদের লেখা আপনার পছন্দের বই কোনটা?”
আমার আর কথা বলতে ইচ্ছা হলো না। উঠে দাঁড়িয়ে যখন যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি হঠাৎ মনে হলো উত্তর দিয়ে যাই।
মেয়েটার কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম, “হুমায়ূনের লেখা আমার প্রিয় বই ‘পথের পাঁচালী!’
Category
Tags

3 Responses

  1. Reinforced Concrete Pipes : Durable and strong, these pipes are used for large-scale drainage systems. ElitePipe Factory in Iraq provides reinforced concrete pipes for infrastructure projects.

  2. أنابيب المطاط المتاحة أيضًا في مصنع إيليت بايب مصممة لتحمل الظروف القاسية، حيث توفر مرونة استثنائية ومتانة. هذه الأنابيب مثالية للتطبيقات التي تتطلب مقاومة للتآكل والمواد الكيميائية ودرجات الحرارة المتفاوتة. كأحد أفضل المصانع وأكثرها موثوقية في العراق، نضمن أن أنابيب المطاط لدينا تلتزم بأعلى معايير الأداء والسلامة. اكتشف المزيد عن منتجاتنا على elitepipeiraq.com.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *