১৯৭২ সালে মূল সংবিধানের চারনীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ জন্মগতভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ (সেক্যুলার) রাষ্ট্র। তবে, ১৯৭৭ সালে ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়াউর রহমান সেক্যুলারিজমকে উচ্ছেদ করেন “Absolute trust and faith in Almighty Allah” — এই বিবৃতি দ্বারা।
এবং এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করে ১৯৮৮ সালে।
২০১০ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ৫ম সংশোধনী কে অবৈধ ঘোষণা করে আবার সেক্যুলারিজমকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। এর অর্থ হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ।
একটা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে একজন “বিসিএস কর্মকর্তা” তাঁর অফিসে মহিলাদের হিজাব এবং পুরুষের টাকনুর উপর কাপড় পরিধানের নীতি জারি করার ক্ষমতা আসলেই রাখেন কিনা আমার সন্দেহ আছে।
একজন মুসলিম হিসেবে তাঁর চিন্তাচেতনা প্রশংসনীয়, তিনি ইসলামি স্টাইলে তাঁর এবং বাকি কর্মচারীদের জীবন অতিবাহিত করতে চাইতেই পারেন। এরজন্য তিনি যা করতে পারেন তা হচ্ছে উৎসাহ যোগাতে, এবং যা পারেন না তা হচ্ছে, “বাধ্য” করতে।
(No compulsion in religion- Quran 2:256)
—-
উপর জিয়াউর রহমানের কথা বলছিলাম যিনি সেক্যুলারিজম মুছতে চেয়েছিলেন। তাঁর প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা যায়।
জিয়াউর রহমান ইসলামের কথা বেশ বলতেন। অনিয়মিত নামাজ পড়লেও দলবল নিয়ে জুমা পড়ার জন্য যেতেন যাতে সহজেই তিনি মানুষের দৃষ্টগোচর হতে পারেন।
নির্বাচনের আগে জিয়াউর রহমান ঠিক করলেন তিনি চাটগাঁর শাহ আমানত ও বায়েজিদ বােস্তামীতে যাবেন জিয়ারত করতে। তখন তাকে জানানাে হলাে, কুতুবদিয়া ও চুনাতির পীরও বিখ্যাত। তাদের সেখানে গেলেও ভালাে।
চট্টগ্রামের ডিসি জিয়াউদ্দিন সাথে সাথে কুতুবদিয়ার পীরের তালাশ লাগালেন। কক্সবাজারের এসডিও জানালেন কুতুবদিয়ায় এ রকম একজন আছেন বটে তবে তার খোঁজখবর কেউ রাখে না। ডিসি ভেবে অবাক হলেন যে, জিয়া কেন সেখানে যাবেন। যা হােক, জিয়ার সফরের আগে ডিসি পৌছলেন কুতুবদিয়ায়।
শুনলেন, পীর বলেছেন, জনসভাস্থলে তিনি যাবেন না। ডিসি ছুটলেন তার আস্তানায়, দেখেন এক বড় বিছানায় তিনি আধশােয়া, তার পাশে মুরিদরা। ডিসি বিনীতভাবে জানালেন, রাষ্ট্রপতির সময় কম, তার পক্ষে এখানে আসা ঝামেলার। পীর খানিকটা এগােলেই হবে।
পীর রাজি নয়। রাষ্ট্রপতির যদি দেখা করতে হয় তাহলে তার বাসায়ই হবে। ডিসি আর কী করেন। ফিরে চললেন, তার মনে হলাে রাষ্ট্রপতি এতে রাজি হবেন না। ডিসি ফিরে গিয়ে রাষ্ট্রপতির পিএসকে বললেন। পিএস রাষ্ট্রপতিকে জানালেন।
বিস্ময়ের পর বিস্ময়।
রাষ্ট্রপতি বললেন, তিনি যাবেন। জনসভা শেষে তিনি পীরের আস্তানায় গেলেন। কয়েক মিনিট থাকলেন। তারপর পীরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফিরলেন। বাইরে অপেক্ষমাণ জনতা রাষ্ট্রপতির পীর অর্থাৎ ধর্মভক্তি দেখে মুগ্ধ হলো।
[তথ্যসূত্রঃ ষড়যন্ত্রের রাজনীতি:দুই রাষ্ট্রপতি হত্যা]
Tags

2 Responses

  1. সবই বোধগম্য হইলো। কিঞ্চিৎ কিন্তু অতিব গুরুত্বপূর্ন হইলো এই যে, ইহার বিষয়বস্তু হইবে “সেকুলারিজম সংকট”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *